মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

ইন্টারনেট এলো যেভাবে !

১৯৬৯ সালের গ্রীষ্মকাল। বিশ্ববাসী তখনো জানে না ইতিহাসের দিনপঞ্জিতে কি বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন গুটিকয়েক কম্পিউটার বিজ্ঞানী। লক্ষ্য একটাই- যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে কর্ম ব্যস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের জন্যে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই রচিত হল শতাব্দীর বিস্ময় ইন্টারনেটের। প্রযুক্তিতে সৃষ্টিহল নতুন এক দিগন্ত। তখনো কোন মানসম্মত অপারেটিং সিস্টেম ছিল না। কম্পিউটার গুলো পরস্পরের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতে পারত না। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা সরবারাহের সবচেয়ে সুবিধাজনক পথ ছিল একটি থেকে ম্যাগনেটিক টেপ বা পাঞ্চ কার্ড নিয়ে অন্যটিতে প্রবেশ করানো। এই প্রতিকুলতা কম্পিউটার বিশারদদের চিন্তিত করে তুলল। এর মধ্যে ছিল জে সি আর লিকলিডার ও রবার্ট টেইলর। অন্য সহকর্মীদের মত তারাও ভাবতে লাগলেন কিভাবে কম্পিউটার গুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এগুলো আরো কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা যায়। আরপা নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রজেক্টে অর্থের জোগান দেয়। টেইলর ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অরপা ডিরেক্টর এর অফিসে টাকার জন্য ধরনা দিতে যাওয়ার দিনটি খুব স্পষ্ট ভাবে মনে করতে পারতেন। ডিরেক্টরের সঙ্গে তার কথা হয় ১৫-২০ মিনিট। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এই সুযোগ লুফে নেন আর ব্যবস্থা করে দেন এক মিলিয়ন ডলালের। বিজ্ঞানীরা কাজটা শুরু করেছিলেন তীব্র অনুরাগের সাথে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার জন্ম দিতে যাচ্ছিল এই অনুভুতি তাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।১৯৬৮ সালে লিকলিডার ও টেইলর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে জানালেন, কম্পিউটার তথ্য আদান প্রদানের জন্য একটি চমৎকার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তারা একটি নেটওয়ার্ক তৈরীর কাজে আত্ননিয়োগ করলেন, যা সৃষ্টি করবে বৈজ্ঞানিকদের নতুন একটি সংঘ,যারা ভৌগলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রযুক্তিগত ভাবে একসুতায় গাঁথা। প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল চারটি সাইটের মধ্যে সংযোগ স্থাপন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারা বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও ইউটাই বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট ভিন্ট সার্ফ, স্টিভ ক্রকার,জন পল্টেল সহ আরো অনেকের উপর দায়িত্ব পড়েছিল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার নির্মাণের। তাদের কাজ ছিল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোর মধ্যে ডাটা সঞ্চালন করার প্রয়োজনীয় তথ্য যাতে তারা সঠিকভাবে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারে। ২১ নভেম্বর এল সেই শুভক্ষণটি। দীর্ঘদিন কঠিন পরিশ্রমের পর অবশেষে তারা প্রস্তুত হলেন প্রথম আনুষ্ঠানিক ডেমনেস্টেশনের জন্যে। একটি কম্পিউটার এর সঙ্গে সংযুক্ত হল শত শত মাইল দুরের অবস্থিত স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউটের ডগ এঞ্জেলবার্টস ল্যাবে রাখা আর একটি কম্পিউটারের। দুঃখের বিষয়, ঐ ঐতিহাসিক মুহূর্ত টি ক্যামেরাবন্দী করে রাখার জন্যে সেদিন সেখানে কোন আলোকচিত্রি ছিল না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন