সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

হাতি বশ করার সিস্টেম !!!

হাতি বশ করার সিস্টেম হচ্ছে- বাচ্চা হাতি ধরে এনে মোটা লোহার শিকল দিয়ে বেধে রাখতে হবে। প্রথম প্রথম হাতির বাচ্চাটা শিকল ভাঙ্গতে গিয়ে টানাটানি করে, পায়ের চামড়া ছিলে ফেলবে, ব্যথায় কান্নাকাটি করবে। দুই একবার চেষ্টা করে শিকল ভাঙ্গতে না পেরে, ডিসিশন নিয়ে নিবে- এই শিকল ভাঙ্গা সম্ভব না। কয়েকদিন পরে চিকন মামুলি একটা সুতা দিয়ে বেধে রাখলেও, শিকল ভাঙ্গতে পারবে না মনে করে, সে আর ট্রাই ই করবে না। বাধ্য হয়ে, সার্কাস দেখিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দিবে।
.
মানুষের বাচ্চাকে বশ করার সিস্টেম হচ্ছে- ছত্রিশটা বই ধরায় দিয়ে, স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট টিচারের খাঁচায় বন্দি করে, সকাল বিকাল কানের কাছে বলতে হবে- তুই ম্যাথে ভালো না, অংক বুঝস না, ইংরেজি পারস না, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হইতে পারবি না। এই একই কথা স্কুলে, বাসায়, প্রতিবেশীদের কাছে শুনতে শুনতে, মানুষের বাচ্চাকে হতাশার শিকলে আটকে ফেলতে হবে। তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, সফল হতে পারবে না- এই ধারণা তার অবচেতন মনে ঢুকিয়ে দিয়ে, নতুন কিছু চেষ্টা করার ইচ্ছাকে নষ্ট করে দিতে হবে। ব্যর্থ হবার ভয় ঢুকিয়ে, কঠিন কিন্তু সম্ভব জিনিসটাকে অসম্ভবের মত করে উপস্থাপন করে, বলতে হবে- জীবন অনেক টাফ, সবাই সবকিছু পারে না। তখনই মানুষের বাচ্চা- নতুন কিছু করার স্বপ্ন বা চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে, টেনেটুনে চাকরি জোগাড় করে বিয়ে, সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিবে।
.

কোন কিছু চেষ্টা না করার প্রধান কারণ হচ্ছে, ভয়। ব্যর্থ হবার ভয়, পরাজিত হবার ভয়। ঠাট্টা-তামাশার পাত্র হবার ভয়। সেই ভয়কে জয় করে একের পর এক চেষ্টা, যে করে যেতে পেরেছে, সে ই সফল হইছে। আর সেই ভয়টা যাকে গিলে ফেলতে পারছে, সে তার জন্য সবচেয়ে ইম্পর্টান্ট কাজটা বাদ দিয়ে, বই খাতা বন্ধ করে, অফিসের কাজে ফাকি দিয়ে, ব্লগে এসে এই পোষ্ট পড়তেছে।

শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?

কেউ যদি জিগ্যেস করে, আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? গলা হাঁকিয়ে বলে দেন- বিজনেস ম্যান, মাল্টি-ন্যাশনালে চাকরি, গাড়ি, বাড়ি, ইত্যাদি। কিন্তু ভুলেও কখনও বলেন না আপনার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে- রাত জেগে প্রিমিয়ার লীগের খেলা দেখা, কে কয়টা গোল করছে তার হিসাব রাখা, ঘন্টার পর ঘন্টা ফেইসবুকের হোমপেইজে স্ক্রল করা। অথচ দিনের পর দিন এই কাজগুলা করেই, স্বপ্ন অর্জন আর বাস্তবতার মধ্যে গ্যাপ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। সেই গ্যাপ বাড়তে বাড়তে স্বপ্নটা এত দূরে চলে গেছে যে, খালি চোখে আর দেখা যায় না। হাবিজাবি কাজগুলা রেগুলারলি করে যেতে পারলেও, ডেইলি বিশ-পঁচিশ মিনিট সময় ম্যানেজ করতে পারেন না। নিজের জন্য, নিজের স্বপ্নের জন্য।
.
পরিচিত কেউ মারা গেলে, আমরা প্রায়ই বলি, উনি জনপ্রিয় শিক্ষক বা গরিবের ডাক্তার অথবা ভালো লিডার কিংবা সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। একবারও কি চিন্তা করে দেখছেন? আজকে যদি আপনি মারা যান, আপনার সম্পর্কে লোকজন কি বলবে? কিংবা এই আপনিই, আপনার মৃত্যুর পর নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? আপনি কি চান লোকজন আপনাকে চিনুক- ক্যান্ডি ক্রাশের ১০০ লেভেল পার করে, গেইম অফ থ্রোনের সবগুলা এপিসোড তিনবার করে দেখে, দুনিয়ার সবগুলা ওয়ানডে-টেস্ট ম্যাচের পরিসংখ্যান মুখস্থ করে, তিন চারটা অনলাইন পত্রিকার চিপা-চাপার সব নিউজ জানা সফল মানুষ হিসেবে? নাকি চান, আপনাকে অন্য কিছু হিসেবে চিনুক? সেটাই যদি হয়, সেটার পিছনে কি সময় দিচ্ছেন?
.


কোন একটা কিছু করতে গেলে, কাজ করার উপায় বের করার আগেই, ছুতার বস্তা নিয়ে বসি। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে, বছরের পর বছর একই ছুতা দিয়ে, জীবন পার করে দিচ্ছি। আমারে কেউ সুযোগ করে দিচ্ছে না, কম্পিটিশন বেড়ে গেছে, দেশে ভালো মানুষের ভাত নাই বলে বলে নিজের ভিতরে আক্ষেপ বাড়াচ্ছি। বৃষ্টি বেশি, গরম বেশি, জ্যাম বেশি, পেটের ভিতরে গ্যাস বেশি, বলতে বলতে হাত পা ছেড়ে আপনি যখন হতাশ হয়ে বসে থাকেন, সেই একই সময়ে অন্য আরেকজন ঠিকই, শীত-গরম, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্লাসে টিচার ভালো পড়াইতে পারে নাই বলে, টিচারের চৌদ্দ গোষ্ঠীরে দশ ঘন্টা গালি দিতে দিতে আপনি যখন চোয়াল ব্যথা করতেছেন, সেই একই সময়ে আরেকজন গুগলে সার্চ মেরে, লাইব্রেরীতে স্টাডি করে এ প্লাস ঠিকই পেয়ে যাচ্ছে। আমি-আপনি যতই ছুতা নিয়ে বসে থাকি না কোনো, দুনিয়ার সবাইরে ছুতা মার্কা পাবলিক বানাইতে পারবো না। কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও আমাদের চাইতে খারাপ কন্ডিশনে থেকেও আমাদের চাইতে যোজন যোজন দুরুত্ব এগিয়ে যাচ্ছে। সঠিক ইচ্ছা, সাধনা আর শ্রম দিয়ে। আমাদেরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে।